Proudly powered by WordPress
রিচার্ড স্টলম্যান – মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের অগ্রনায়ক

আশির দশকের শুরুর দিকের কথা। তখন তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্বে শুরু হলো সফট্‌ওয়ার নিয়ে ব্যবসা। কমার্শিয়াল সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো হাত করা শুরু করলো আর্টেফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ল্যাবের বাঘা বাঘা সব প্রোগ্রামারদের। লুকাছাপা শুরু হলো সফটওয়্যারের সোর্স কোড নিয়ে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের সাধ্যের বাইরে চলে গেল দরকারী সব সফটওয়্যার। সফটওয়্যার হয়ে গেল বন্দি। তখন রিচার্ড স্টলম্যান নামের একজন এগিয়ে এলেন সফটওয়্যারের মুক্তির দাবি নিয়ে। তিনি চাইলেন সফটওয়্যার হবে উন্মুক্ত, সবার ব্যবহারের উপযোগী। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো মুক্ত সফটওয়্যার ধারণার প্রবর্তক “রিচার্ড স্টলম্যান” সম্পর্কে।

রিচার্ড স্টলম্যান
রিচার্ড স্টলম্যান

তাঁর পুরো নাম রিচার্ড ম্যাথিউ স্টলম্যান। তিনি ১৯৫৩ সালের ১৬ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ড্যানিয়েল স্টলম্যান ছিলেন নিউ ইয়র্কের একটি ছাপাখানার এজেন্ট এবং মা এ্যালিস লিপম্যান ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা। ছোটবেলা থেকেই তাঁর কম্পিউটার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির অভ্যাস ছিল। কৈশোরে প্রবেশের আগেই তিনি একবার সামার ক্যাম্পে আইবিএম ৭০৯৪ (IBM 7094)-এর জন্য ম্যানুয়্যাল পড়েন। হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়ে প্রথম কম্পিউটারের সাথে তাঁর পরিচয় হয় আইবিএম নিউ ইয়র্ক সায়েন্টিফিক সেন্টারে। ১৯৭০ সালে তারা তাদের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কাজ করার জন্য স্টলম্যানকে নেন। সেখানে তাঁর কাজ ছিল ফোরটার্ন (Fortran) দিয়ে সাংখ্যিক বিশ্লেষণের (নিউমেরিক্যাল অ্যানালাইসিস) একটি প্রোগ্রাম তৈরি করা। রিচার্ড স্টলম্যান মাত্র দুই সপ্তাহে এই কাজটি শেষ করেন এবং গ্রীষ্মকালীন অবসরের বাকি সময়টুকু ব্যয় করেন এপিএল (APL) দিয়ে একটি টেক্স এডিটর এবং আইবিএম-এর জন্য একটি প্রি-প্রসেসর তৈরির কাজে। সেই সময়ে তিনি রকেফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান বিভাগের ভলান্টিয়ার হিসেবেও কাজ শুরু করেন। যদিও তাঁর ধ্যানজ্ঞান গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানকে ঘিরেই ছিলো।

তরুণ স্টলম্যান
তরুণ স্টলম্যান

১৯৭১ সালের জুন মাসে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারে একজন প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। একজন হ্যাকার হিসেবেও তাঁর হাতেখড়ি হয় সেখানেই। তখন কম্পিউটার এবং এর নিরাপত্তা সম্পর্কে যারা খুব দক্ষ ছিলেন তাদেরকে হ্যাকার বলা হতো। হ্যাকিংয়ের যাত্রা শুরু এমএইটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারেই। স্টলম্যান “RMS” নামে খুব অল্প দিনের মাঝে এমআইটি-র হ্যাকার সমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। উল্লেখ্য, “RMS” তার পুরো নাম রিচার্ড(R) ম্যাথু(M) স্টলম্যান(S)-এর আদ্যক্ষর নিয়ে তৈরি করা সংক্ষিপ্ত রূপ। হ্যাকার হিসেবে তার বেশ কিছু আলোচিত ঘটনাও আছে। ১৯৭৭ সালে এমএইটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগারে প্রত্যেক ছাত্রকে কম্পিউটারে লগইন করার জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। স্টলম্যানের এই পাসওয়ার্ডের গঠন মোটেও পছন্দ হয় নি। তিনি পাসওয়ার্ড হ্যাক করে সবার পাসওয়ার্ড তুলে দিয়ে সেই খবর সবাইকে ই-মেইলে জানিয়ে দিলেন। হার্ভার্ডে প্রথম বর্ষে পড়াকালীন সময়ে গণিতের সুপার জিনিয়াস হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেনঃ
“আমি অনেক আনন্দিত হই, যখন জীবনে প্রথমবারের মত আমি বুঝতে পারি হার্ভার্ডে আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি জায়গা হয়েছে।”

স্টলম্যান- এমআইটির আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ল্যাবে
স্টলম্যান- এমআইটির আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ল্যাবে

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। স্টলম্যান এমআইটি-তে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য ভর্তি হলেও কিছুদিন পর সেটা বাদ দিয়ে এমআইটির ল্যাবে গবেষণার কাজে তিনি মনোনিবেশ করেন।
এমআইটিতে গ্যারি স্যাসম্যানের সাথে রিসার্চ এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সময় ১৯৭৭ সালে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর একটি পেপার প্রকাশ করেন। পেপারটির শিরোনাম ছিলো , “ডিপেন্ডেন্সি ডাইরেক্টেড ব্যাকট্রাকিং”। ২০০৩ সালে গ্যারি এবং স্টলম্যান এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইন্টেলিজেন্স ব্যাকট্রাকিং পদ্ধতিটিকে আরো সমৃদ্ধ করেন যেটি এখন ইন্টেলিজেন্স ব্যাকট্রাকিং এর সবচেয়ে শক্তিশালি ধরণ হিসেবে গৃহীত।
উজ্জীবিত হ্যাকার সংস্কৃতির মধ্যে কাটছিলো স্টলম্যানের দিনকাল। আশির দশকের শুরুর দিকে এই সংস্কৃতি ধীরে ধীরে নিভে যেতে থাকলো।প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতার লক্ষ্যে সফটওয়্যার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সফটওয়্যারের সোর্স কোড বিতরণ করা বন্ধ করে দিতে থাকে এবং একই সাথে কপিরাইটের মাধ্যমে সফটওয়্যাররের কপি বিতরণ করা থেকে ব্যবহারকারীদের বিরত করতে থাকে। এই সময়ে রিচার্ড স্টলম্যানের একদিন জরুরি কিছু কাগজ প্রিন্ট করার সময় জেরক্স ৯৭০০ মডেলের প্রিন্টারে কিছু সমস্যা হয় । প্রিন্টারটি ছিল এর নির্মাতা সংস্থা থেকে বিনামূল্যে পাওয়া। স্টলম্যান প্রিন্টারের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রিন্টার সফটওয়্যারের সোর্স কোডে কিছু পরিবর্তন করতে চাইলেন, কিন্তু প্রিন্টার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি অনুসারে এমআইটির এআই ল্যাব সোর্স কোড দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই ঘটনার ফলে তাঁর উপলব্ধি দৃঢ়তর হয় যে, প্রত্যেক ব্যবহারকারীর সফটওয়্যার পরিবর্তন করার অধিকার থাকা উচিত। সেই থেকে মুক্ত সফট্‌ওয়্যার আন্দোলনের শুরু। ১৯৮৩ সালে মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের জন্য ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন (এফএসএফ) প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এমআইটির প্রোগ্রামের চাকুরি ছেড়ে শুরু করেন গনু (GNU) প্রকল্পের কাজ।
১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে গনু প্রকল্পের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশিত হয় গনু প্রকল্পের ইশতেহার। সেখানে জানানো হয় ইউনিক্সের মত একটি মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম তৈরির করা কথা যেটার সোর্স কোড বিতরণ এবং পরিবর্তন করা যাবে। মুক্ত সফটওয়্যারের বিতরণ এবং রূপান্তর যেন কপিরাইটের হুমকির মুখে না পড়ে সেজন্য স্টলম্যান এক নতুন ধারণার জন্ম দেন যার নাম “কপিলেফ্‌ট”।
নব্বই দশকের শুরুর দিকে গনু অপারেটিং সিস্টেম যখন উন্মুক্ত হবার জন্য অপেক্ষা করছে, তখন দেখা গেলে এর বড় অংশের কাজটিই অসম্পূর্ণ। সেটি হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল। অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল তৈরির জটিল অংশের কাজটি সহজ করে দেয়ার জন্য এগিয়ে আসেন ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিনুস টরভালডস্‌। ইউনিক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম “মিনিক্স” নিয়ে শখের বশে কাজ করতে করতে ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে লিনুস তৈরি করে ফেলেন একটি অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল। ফলে গনু অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল হিসেবে একেই বেছে নেয়া হয়। জন্ম নেয় মুক্ত সফটওয়্যার যুদ্ধের সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র- “লিনাক্স”। লিনাক্স আসার পরপরই মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলন একটি নতুন মাত্রা পায়। উন্মুক্ত সোর্সকোড ভিত্তিক এই অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ব্যবহারকারী এবং প্রোগ্রামারদের সামনে নতুন দ্বার উন্মোচন করে।
ব্যক্তিগত জীবনে রিচার্ড স্টলম্যান অত্যন্ত সাধাসিধে জীবন যাপন করেন। প্রোগ্রামিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি এই বিজ্ঞানীর রয়েছে রান্নাবান্না করার শখ। পিডিপি-10 (PDP-10) নামক তাঁর একটি কম্পিউটার আছে। তিনি বলে থাকেন তিনি তাঁর এই কম্পিউটারের সাথে ১০ বছর বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছেন। তবে ১৯৯৫ সালে মেলিয়েন্ডা রেইড নামক এক তরুণীর প্রেমে তিনি পড়েছিলেন। কিন্তু নানাবিধ কারণে মেলিয়েন্ডার সাথে তাঁর ঘর বাঁধা হয়ে উঠে নি। তিনি বলেনঃ “মেলিয়েন্ডাকে আমি ১৯৯৫ সালে একটি কনফারেন্সে প্রথম দেখতে পাই। সেটি ছিল আমার প্রথম দেখায় প্রেম।”
খৃষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি নিজে কোন ধর্মের অনুসারী নন। তাই ২৫শে ডিসেম্বর তিনি ক্রিসমাস পালন না করে গ্র্যাভমাস পালন করেন যা পুরনো ধারার ক্যালেন্ডার অনুসারে স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্মদিন।
স্টলম্যান মাঝে মাঝে কাজ শেষে তিনি তাঁর অফিসেই ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর নেই কোন মোবাইল ফোন। ব্যক্তিগত সম্পদ বলতে তাঁর কিছুই নেই। তাঁর কোঁকড়া লম্বা চুল এবং সম্মোহিত সবুজ চোখের কারণে তাঁকে “রাসপুটিনের মত” বলা হয়ে থাকে।
ম্যাসাচুসেট ইন্সটিউট অফ টেকনোলজির দশম তলায় তাঁর অফিস এবং সেখানেই তিনি বসবাস করছেন বর্তমানে। ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশে। ঢাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশন‍-বাংলাদেশ আয়োজিত “একটি মুক্ত ডিজিটাল সমাজ” শীর্ষক সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন তিনি। সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেয়ার পর তিনি বলেনঃ “হ্যাপি হ্যাকিং”।
ওয়্যারড ম্যাগজিন তাঁকে বর্তমান কালের জীবিত প্রোগ্রামারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
লেখক : তামান্না নিশাত রিনি।

ল্যারি পেজ – গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা

“গুগল” – আজকের এই যুগে সবার কাছে অতি প্রয়োজনীয় এবং পরিচিত একটি নাম।  যেটির শুরু হয়েছিল একজনের ব্যক্তিগত গ্যারেজ থেকে। তথ্য খোঁজার ব্যাপারে সে একজন জিনিয়াস। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো বিশ্ববিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজসম্পর্কে।  
লরেন্স ল্যারি পেজ ১৯৭৩ সালের ২৬ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের ইষ্ট ল্যান্সিং এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কার্ল ভিনসেন্ট পেজ এবং মা গ্লোরিয়া পেজ দুইজনেই ছিলেন মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক। যদিও ল্যারির মা গ্লোরিয়া একজন ইহুদি ছিলেন, কিন্তু ছোটবেলা থেকে তিনি ল্যারিকে কোন ধর্মীয় মতবাদের গড়ে উঠার ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করেননি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানী বাবা-মায়ের সন্তান হিসেবে ল্যারি পেইজ বড় হচ্ছিলেন বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও প্রযুক্তি ঘেরা পরিবেশে । ল্যারি তাঁর ছোটবেলা সম্পর্কে বলেন, “আমাদের বাসায় কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং টেকনোলজিক্যাল বইয়ের ছড়াছড়ি ছিলো। ছোটবেলায় আমি সেসব নিয়ে মগ্ন থাকতাম। ১২ বছর বয়সেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আমি একটি প্রতিষ্ঠান করতে যাচ্ছি।”
কম্পিউটারের উপর ল্যারির প্রথম আগ্রহ জন্মে যখন তাঁর বয়স মাত্র ৬ বছর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া প্রথম শিশু হিসেবে তিনি ওয়ার্ড প্রসেসিং ব্যবহার করে একটি এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেন। বড় ভাইয়ের উৎসাহে তিনি  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেনঃ “খুব ছোটবেলায় আমি বুঝতে পারি আমার আবিষ্কারের একটা নেশা রয়েছে। সেই থেকে আমি প্রযুক্তি এবং ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠি।”
ল্যারি ওকেমস মন্টেসরী রেডমুর স্কুলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ইষ্ট ল্যান্সিং হাই স্কুলে ভর্তি হন । সেখান থেকে ১৯৯১ সালে পাশ করার পর তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি লেগো দিয়ে একটি ইঞ্জেক্ট প্রিন্টার তৈরি করেন। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর ল্যারি স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। ১৯৯৩ সালে তিনি সৌর গাড়ি নির্মান গবেষণার সদস্য হন।

তরুণ ল্যারি
তরুণ ল্যারি

স্নাতকোত্তর শেষ করার পর তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হন। বসন্তকালীন পিএইচডি অরিয়েন্টেশনের সময় সার্জে ব্রিনের সাথে ল্যারি পেজের দেখা হয়। তখন থেকেই তাঁরা বন্ধু হয়ে যান। দুই বন্ধু মিলে পেজ র‌্যাংক অ্যালগরিদম উদ্ভাবন করেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি করার সময় তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের গানিতিক বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের বিশাল লিংক ভান্ডার এবং কনটেন্ট নিয়ে তিনি এবং সার্গেই ব্রিন গবেষণা প্রোজেক্ট করেন, যার নাম দেন ব্যাকরাব (BackRub)।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ প্রজেক্ট হিসেবে দুই বন্ধু ল্যারি এবং সার্গেই একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন, যেটির কাজ ছিলো জনপ্রিয় পেজগুলোর তালিকা করে সবচেয়ে জনপ্রিয় পেজের তথ্যকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করা। সার্চ ইঞ্জিনটির কাজ শুরু হয় ল্যারি এবং সার্গেই-এর এক সহপাঠীর গ্যারেজে। এই সার্চ ইঞ্জিনটির নাম তাঁরা দেন “গুগল”। ১৯৯৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর Google.com  নামে একটি ডোমেইন তাঁরা নিবন্ধন করেন।

images (1)
ল্যারি পেজ এবং সার্জেই ব্রিন -দুই বন্ধু

সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করলেও নতুন একটি কোম্পানি খোলার মত টাকা দুই বন্ধুর কাছে ছিলো না । এবার দুই বন্ধু নেমে গেলের অর্থ যোগানের কাজে। সেইসময় দুই বন্ধুর পাশে এসে দাঁড়ান সান মাইক্রো সিস্টেমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এন্ডি বেথটোশেইম। কোম্পানি হওয়ার আগেই তিনি পেজ আর ব্রিনকে এক লাখ ডলার দেন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে যোগার করলেন ১ মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ দিয়েই ল্যারি পেজ সার্জে ব্রিন ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “গুগল ইনকর্পোরেট”। এই সময় তারা ৬০ মিলিয়ন পেজ ইনডেক্স করে ফেলেন। আর গুগলের সার্চ রেজাল্ট ঐ সময়ের সার্চ ইঞ্জিনগুলোর চেয়ে ভাল অবস্থান করে ফেলে। সেই থেকে গুগল হয়ে উঠে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। শুরুটা গ্যারেজে হলেও দুই বছরের মাথাতেই ল্যারি পেইজ ‍ও সার্জেই ব্রিন তাদের কোম্পানী স্থানান্তর করে নিয়ে যান ১৬৫ ইউনিভার্সিটি এভিনিউ- পালো আল্টো তে।  তিন বছরের মাথায় গুগলের প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৭০০ ডলারে!
ল্যারি পেইজ ২০০৭ সালের ৮ ডিসেম্বর লুসিন্ডা সাউথওয়ার্থকে বিয়ে করেন। বর্তমানে ল্যারি পেইজ এক সন্তানের জনক।
২০শে জানুয়ারি, ২০১১ সালে পেইজকে গুগলের প্রধান নির্বাহী ঘোষণা দেওয়া হয় এবং তিনি ৪ঠা এপ্রিল, ২০১১ থেকে দায়িত্ব পালন করেন। গুগল এর নতুন সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর গুগলের  ল্যারি পেইজ বার্ষিক ১.২৫ মিলিয়ন ডলার বেতন পান।
বর্তমানে ল্যারি পেইজ ভোকাল-কর্ড প্যারালাইসিস এ আক্রান্ত। এটি তার কণ্ঠ ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছে, তবে প্রাত্যহিক কাজে কোন সমস্যা হচ্ছে না। ১৪ বছর আগে খুব খারাপভাবে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার একটি ভোকাল কর্ড প্যারালাইজড হয়ে যায় এবং ডাক্তার এর কোন কারণ খুঁজে না পাওয়ায় তার গলার স্বর এখন  পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তই থেকে গেছে।
ফরচুন সাময়িকীর চোখে ২০১৪ সালের বর্ষসেরা ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব (বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার) নির্বাচিত হয়েছেন গুগলের প্রধান নির্বাহী ল্যারি পেজ। এছাড়া ২০১১ সালে পেজ  ইউ এস সাময়িকী ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের ১১তম সেরা ধনী ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হন।

গ্রেস হোপার

বাগ (Bug), সফট্‌ওয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে খুবই পীড়াদায়ক একটি শব্দের নাম। বাগ-এর কারণে সফট্‌ওয়্যারে অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল রেজাল্ট বা আউটপুট আসে। এই “বাগ” শব্দটি যিনি সর্বপ্রথম পরিচিত করেন তিনি মার্কিন গণিতবিদ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী গ্রেস হোপার (Grace Hopper), যার উপাধি “দ্যা কুইন অফ কোড”। এই লেখায় আমরা জানবো তাঁর সম্পর্কে।

download (1)
গণিতবিদ এবং বিজ্ঞানী গ্রেস হোপার

গ্রেস ব্রিউস্টার মুরে ৯ ডিসেম্বর ১৯০৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ওয়াল্টার ফ্লেচার মুরে ছিলেন ওলন্দাজদের বংশধর এবং ক্যাম্পবেল ভ্যান হর্ন ছিলেন স্কটিশদের বংশধর। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে গ্রেস ছিলেন বড়। তাঁর দাদা অ্যালেকজান্ডার উইলশন রাসেল মার্কিন নৌবাহিনীর একজন এডমিরাল ছিলেন, যিনি গৃহযুদ্ধ “ব্যাটল অফ মোবাইল বে”-তে যুদ্ধ করেছিলেন।
ছোটবেলা থেকেই হোপার ছিলেন খুব উৎসুক স্বভাবের। কোন যন্ত্র দেখলেই তিনি চিন্তা করতেন এটি কিভাবে কাজ করে। তাঁর একটি এ্যালার্ম ঘড়ি ছিল। একবার তিনি সেটির প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ খুলে দেখার চেষ্টা করেন এটি কিভাবে কাজ করছে। তখন তাঁর বয়স মাত্র সাত। সুন্দরভাবে ঘড়িটির যন্ত্রাংশ খুলতে পারলেও তিনি সেটি পুনরায় জুড়ে দিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হন। হোপারের মা বুঝে উঠার আগেই তিনি বাসায় রাখা বাকি সাতটি ঘড়ির পোষ্টমর্টেম করে ফেলেন। তাঁর এই অদম্য কৌতূহলই তাঁকে পরিণত করে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান একজন বৈজ্ঞানিক হিসেবে।
প্রাথমিক শিক্ষার জন্য গ্রেস হোপার নিউজার্সির হেরিটেজ স্কুলে ভর্তি হন। বিজ্ঞান এবং গণিতে তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি। সেখানকার পড়াশোনার পার্ট চুকিয়ে ১৯২৪ সালে তিনি নিউ ইয়র্কের ভ্যাসার কলেজে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১৬ বছর বয়সে প্রথম যখন ভ্যাসার কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেন, তখন “ল্যাটিন ভাষা” অংশে খুবই কম নাম্বার পাওয়ায় তিনি ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। ফলে পরের বছর আবার পরীক্ষা দিয়ে ভ্যাসার কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা তিনি অর্জন করেন।

তরুণী হোপার
তরুণী হোপার

১৯২৮ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করার পর তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৩০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করার পর তিনি সেই বছরই নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, ভিনসেন্ট ফস্টার হোপারকে বিয়ে করেন এবং তখন থেকেই  নিজের নামের সাথে “হোপার” পদবি যুক্ত করেন। ১৯৪৫ সালে ভিনসেন্ট ফস্টার হোপারের সাথে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পরেও তিনি তাঁর “হোপার” পদবি ত্যাগ করেননি।
১৯৩১ সালে তিনি শিক্ষক হিসেবে ভ্যাসার কলেজে যোগদান করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি গণিতে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর পিএইচডি থিসিসের শিরোনাম ছিলো, “A New Criterion for Reducibility of Algebraic Equations”। গ্রেস হোপার ছিলেন তাঁর সময়ের স্বল্পসংখ্যক মেয়েদের একজন যিনি গণিত বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত তিনি ভ্যাসার কলেজে এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, ১৯৪৩ সালে তিনি ইউএস নেভীতে যোগদান করেন। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তিনি লেফটান্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের “ব্যুরো অফ অর্ডিনেন্স কম্পিউটেশন” প্রজেক্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ছিলেন তৃতীয় ব্যক্তি যিনি হার্ভার্ড মার্ক ওয়ান (Harvard Mark  I ) কম্পিউটারের প্রোগ্রাম লিখেন।

মার্কিন নৌবাহিনীতে কর্মরত  হোপার
মার্কিন নৌবাহিনীতে কর্মরত হোপার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে গ্রেস হোপার নৌবাহিনীর মৌলিক দায়িত্ব থেকে সরে আসেন। তবে তিনি রিজার্ভ হিসেবে সেখানে কর্মরত ছিলেন ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত। সেইসময় তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মার্ক-১  এবং মার্ক-২ কম্পিউটারের উপরে কাজ করা শুরু করেন। এর মধ্যে হঠাৎ মার্ক-২ কম্পিউটারটি বিকল হয়ে যায়। গ্রেস হপার যন্ত্রটি খোলার পর সেখানে একটি মথ (প্রজাপতি) আবিষ্কার করেন, যেটির কারণে যন্ত্রটি বিকল হয়ে গিয়েছিলো। এই মথটির কথা হপার লগবুকে উল্লেখ করেন (মথটি সহ), এবং এই ঘটনা হতেই কম্পিউটারের সমস্যা বা ত্রুটিকে বাগ (Bug = পোকা) বলা হয়ে থাকে।

গ্রেস হোপারের নোটবুকে সংরক্ষিত সেই মথ । যা থেকে কম্পিউটার বাগ শব্দের উদ্ভব
গ্রেস হোপারের নোটবুকে সংরক্ষিত সেই মথ । যা থেকে “কম্পিউটার বাগ” শব্দের উদ্ভব

১৯৪৯ সালে হোপার “একার্ট মুচলি কম্পিউটার কর্পোরেশান”-এ ম্যাথমেটিশিয়ান হিসেবে যোগদান করেন এবং UNIVAC  তৈরি দলের সাথে কাজ করা শুরু করেন। সেই সময়েই হোপার “র‍্যামিংটন র‍্যান্ড কর্পোরেশন”-এর সাথে যুক্ত হয়ে সর্বপ্রথম কম্পাইলার তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৯৫২ সালে এটি তৈরিতে তিনি সফল হন। কিন্তু বিষয়টি অনেকেই বিশ্বাস করতে কিংবা বুঝতে চাইত না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ
আমার কাছে একটি সচল কম্পাইলার ছিল যেটি কেউ ছুঁয়েও দেখত না। কারণ সবাই বলত যে কম্পিউটার গণিতের হিসাব ছাড়া আর কিচ্ছু পারে না।

UNIVAC কিবোর্ডের সামনে গ্রেস হোপার
UNIVAC কিবোর্ডের সামনে গ্রেস হোপার

১৯৫৪ সালে হোপার র‍্যামিংটন র‍্যান্ড কোম্পানির ডিরেক্টর হন এবং সেই কোম্পানি থেকেই প্রথম কম্পাইলার নির্ভর প্রোগ্রামিং ভাষা ম্যাথ-মেটিক (MATH-MATIC) এবং ফ্লো-মেটিক (FLOW-MATIC) উদ্ভাবিত হয়। পরবর্তিতে তিনি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষা কোবল (COBOL) তৈরির দলকে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন। এখানে তিনি ফ্লো-ম্যাটিক ভাষার কিছু ধারণা ব্যবহার করেন। হোপার বিশ্বাস করতেন, যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষা মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ এর মত না হয়ে ইংরেজি ভাষার কাছাকাছি হওয়াটা হবে যুক্তিসঙ্গত।
মার্কিন নৌবাহিনীর রিজার্ভ থেকে ১৯৬৬ সালে গ্রেস হোপার কমান্ডার মর্যাদা নিয়ে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর নেয়ার পর বেশ কিছু বছর তিনি কম্পিউটিং শিল্পে কাজ করেন। ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মত মেয়ে হিসেবে এককভাবে তিনি “ন্যাশন্যাল মেডেল অফ টেকনোলজি” পুরষ্কার অর্জন করেন।
৮৫ বছর বয়সে ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে মৃত্যুবরণ করেন। আর্লিংটন ন্যাশনাল সিমেট্রিতে চিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। কম্পিউটার সায়েন্সে মেয়েদের উৎসাহিত করার জন্য  “অ্যাসোসিয়েশন অফ কম্পিউটিং মেশিনারি (ACM)”  এর পক্ষ থেকে “গ্রেস মুরে হোপার পুরষ্কার” প্রদান করা হয়ে থাকে । ২০১৩ সালে হোপারের ১০৭ তম জন্মদিনে গুগল ডুডলের মাধ্যমে স্মরণ করা মহান এই গণিতবিদকে।
লেখক : তামান্না নিশাত রিনি।

এটস্‌খার ডেইক্‌স্ট্রা

আমরা যারা কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করি, তাদের কাছে খুব পরিচিত একটা শব্দ শর্টেস্ট প্যাথ অ্যালগরিদম (Shortest  Path  Algorithm)। ডেইক্‌স্ট্রা অ্যালগরিদম একটি জনপ্রিয় শর্টেস্ট প্যাথ অ্যালগরদিম। এই অ্যালগরিদমের প্রণেতা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা একজন। তিনি এট্‌সখার ডেইক্‌স্ট্রা। টেক-জিনিয়াসের আজকের এই লেখায় আমরা জানবো মহান বিজ্ঞানী এটস্‌খার ডেইক্‌স্ট্রা  সম্পর্কে।

download
বিজ্ঞানি এটস্‌খার ডেইক্‌স্ট্রা

এটস্‌খার ওয়াইব ডেইক্‌স্ট্রা ১৯৩০ সালের ১১ মে নেদারল্যান্ডের  রোটেরডেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবারই ছিল বিজ্ঞানমনস্ক পরিবার। তাঁর বাবা ডিউই ওয়াইব ডেইক্‌স্ট্রা ছিলেন একজন রসায়নবিদ, যিনি ডাচ্‌ কেমিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তাঁর মা ব্রেটজা কর্‌নেলিয়া ক্রুয়াইপার ছিলেন একজন গণিতবিদ। ডেইক্‌স্ট্রার মা একজন প্রতিভাবান গণিতবিদ হওয়া সত্ত্বেও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন না। ডেইক্‌স্ট্রা পরবর্তিতে তাঁর মা সম্পর্কে লেখেনঃ
“তাঁর যেকোন গাণিতিক সমস্যা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সুনিপুণভাবে সমাধান করার এক আশ্চর্‍্য ক্ষমতা ছিল।”
ডেইক্‌স্ট্রা, রোটেরডেম শহরেই বেড়ে উঠেন এবং প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। তিনি ১৯৪২ সালে জিমনেসিয়াম ইরাসমিনিয়াম হাই স্কুলে ভর্তি হন। হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ইংরেজি, গণিত, রসায়ন ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি তাঁর গ্রীক, ল্যাটিন, জার্মান ইত্যাদি ভাষা শেখার প্রতিও সমান আগ্রহ ছিল। স্কুলজীবনের শেষ বছরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন আইন নিয়ে পড়াশোনা করে আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার। কারণ তাঁর ইচ্ছা ছিল নেদারল্যান্ডকে জাতিসংঘে উপস্থাপন করা এবং সেটি করার জন্য আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নেয়া হবে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। ১৯৪৮ সালে তিনি স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বিজ্ঞানের বিষয়ে এত ভাল করার ফলে ডেইক্‌স্ট্রার শিক্ষক এবং বাবা-মা মিলে তাঁকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য রাজি করান। বাবা-মা এবং শিক্ষকদের উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে ডেইক্‌স্ট্রা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান-এ (Theoretical Physics ) ইউনিভার্সিটি অফ লেইডেন-এ ভর্তি হন।

edsger_dijkstra8
তরুণ ডেইক্‌স্ট্রা

১৯৫১ সাল, তখন পুরোদমে চলছে ডেইক্‌স্ট্রার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষা। সেই বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর বাবার চোখ হঠাৎ একটি বিজ্ঞাপনে আটকে যায়। বিজ্ঞাপনটি ছিল ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত তিন সপ্তাহের একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্সের। ডিউই অর্থাৎ ডেইক্‌স্ট্রার বাবা চিন্তা করলেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করতে জানা হবে একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদের জন্য একটি বিশেষ দক্ষতা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ডেইক্‌স্ট্রাকে সেই প্রোগ্রামিং শর্ট কোর্সের জন্য নিবন্ধিত করেন।
সেই কোর্স করার জন্য প্রথমবারের মত ডেইক্‌স্ট্রা নেদারল্যান্ড থেকে বাইরে ইংল্যান্ডে যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ
“সেটা ছিল আমার জন্য একটি ভীতিকর অভিজ্ঞতা; প্রথমবারের মত আমি নেদারল্যান্ড ছেড়ে যাই, পুরোপুরি নতুন একটি বিষয় নিজে নিজে আমি আত্মস্থ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি সেটা অত্যন্ত পছন্দ করেছিলামও।”   
শর্ট প্রোগ্রামিং কোর্সটি সম্পন্ন করার পর ডেইক্‌স্ট্রা ১৯৫২ সালে ম্যাথমেটিক্যাল সেন্টার ইন আমস্টারডাম-এ খন্ডকালিন চাকুরিতে যোগদান করেন এবং সে সময় তিনি বুঝতে পারেন তাঁর আগ্রহ পদার্থবিজ্ঞান থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর দিকেই বেশি। তিনি দ্রুত তাঁর তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ডিগ্রী সমাপ্ত করে প্রোগ্রামার হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে তখন প্রোগ্রামার কোন স্বীকৃত পেশা ছিল না। ১৯৫৭ সালে স্যার ডেইক্‌স্ট্রা যখন মারিয়া সি ডিবার্টস্‌-কে বিয়ে করতে যান তখন তিনি ঝামেলায় পরে যান। ম্যারেজ লাইসেন্সে “প্রোগ্রামার” পেশাকে আমস্টারডাম কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলস্বরূপ “তাত্ত্বিক পদার্থবিদ” নিজের পেশা হিসেবে ম্যারেজ লাইসেন্সে লিখতে তিনি বাধ্য হন।
১৯৫৬ সালে ডেইক্‌স্ট্রা শর্টেস্ট প্যাথ অ্যালগরিদম প্রকাশ করেন, যেটা ছিল একটা পয়েন্ট থেকে অন্য আরেকটা পয়েন্টে যাবার জন্য সর্বোত্তম পন্থা। এই অ্যালগরিদমটির সাহায্যে খুব কম সংখ্যক কপার তার ব্যবহার করে বিভিন্ন দরকারি সার্কিটে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তিনি এই অ্যালগরিদমটির নাম দিয়েছিলেন, “শর্টেস্ট সাব-স্প্যানিং ট্রি এ্যালগরিদম”।
১৯৬০ তে ডেইক্‌স্ট্রা কি-বোর্ড এবং কম্পিউটারের মধ্যকার যোগাযোগের জন্য পারস্পারিক বর্জননীতির (mutual exclusion) ধারণার প্রবর্তন করেন, যেটি ১৯৬৪ সাল থেকে আধুনিক প্রসেসর এবং মেমোরী বোর্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেইক্‌স্ট্রার এই পারস্পারিক বর্জননীতি প্রথম IBM ব্যবহার করে তাদের ৩৬০ আর্কিটেকচারে।

IBM 360 আর্কিটেকচার
              IBM 360 আর্কিটেকচার

অপারেটিং সিস্টেমের জনপ্রিয় সমস্যা “ডাইনিং ফিলোসপার প্রবলেম” প্রথম স্যার ডেইক্‌স্ট্রা শনাক্ত করেন। তিনি কম্পিউটার সফট্‌ওয়্যার শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করেন গো টু (GOTO) স্টেটমেন্টকে বিপদজনক ঘোষণা করে (Go To considered harmful) । ১৯৬৮ সালে এই বিষয়ে  “এ কেস অ্যাগেইনস্ট গো টু স্টেটমেন্ট (A case against Go To statement)” শিরোনামে তিনি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।
এটস্‌খার ডেইক্‌স্ট্রা অ্যালগোল 60 (ALGOL  60)-এর একজন বিশেষ ভক্ত ছিলেন এবং এই ল্যাঙ্গুয়েজের কম্পাইলার তৈরিতেও তিনি মৌলিক অবদান রাখেন।
১৯৭২ সালে মহান বিজ্ঞানী এটস্‌খার ডেইক্‌স্ট্রা কম্পিউটার বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরষ্কার টুরিং পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বারোজ রিসার্চ ফেলো হন এবং ১৯৮৪ সালে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের সভাপতির পদ অলংকৃত করেন।

স্যার ডেইক্‌স্ট্রার হাতের লেখা
                  স্যার ডেইক্‌স্ট্রার হাতের লেখা

কম্পিউটার সায়েন্স সম্পর্কে তাঁর উক্তি ছিলঃ“মানুষের মনে বদ্ধমূল ধারণা যে কম্পিউটার সায়েন্সের কাজ হচ্ছে যন্ত্র এবং এর যন্ত্রাংশ নিয়ে। যেটি আসলে সত্যি নয়”।
মহান এই বিজ্ঞানি দীর্ঘসময় ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ২০০২ সালের ৬ আগস্ট নেদারল্যান্ডের ন্যুইনেন শহরের মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি “সেলফ স্ট্যাবিলাইজেশন অফ প্রোগ্রাম কম্পিউটেশন” এ কাজের অবদান স্বরূপ এসিএম পিওডিসি ইনফ্লুয়েন্সিয়াল পেপার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেই বছরই তাঁর সম্মানার্থে ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং এর উপর দেয়া  এসিএম পিওডিসি ইনফ্লুয়েন্সিয়াল পেপার অ্যাওয়ার্ডকে “ডেইক্‌স্ট্রা অ্যাওয়ার্ড” নামকরণ করা হয়।
 লেখক : তামান্না নিশাত রিনি।

স্টিভ জবস্‌ (শেষ পর্ব )

আধ্যত্মিক জ্ঞান অর্জন শেষে আবারও সিলিকন ভ্যালির ইলেকট্রনিক বর্জ্যের ভাগাড়ে ফিরে এলেন জবস। বন্ধু উজের সঙ্গে কম্পিউটার বোর্ড বানানোর কাজ শুরু করলেন। আশপাশের অনেকে সার্কিট বোর্ডটি বেশ পছন্দ করল। এরপর আর্কেড ভিডিও গেম ব্রেকআউটের জন্য সার্কিট বোর্ড তৈরির কাছে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। প্রত্যেক চিপের জন্য $১০০ দেওয়ার প্রস্তাব দেয় অ্যাটারি। সার্কিট বোর্ড ডিজাইনে জবসের একটু বিশেষ জ্ঞান ছিল এবং তিনি ওজনিয়াকের সাথে সমানভাবে ফি ভাগ করে নেওয়ার চুক্তি করেন কিন্তু ওজনিয়াকের সাথে একটা শর্ত ছিল। আর তা হলো চিপের সংখ্যা কমাতে হবে। অ্যাটারি ইঞ্জিনিয়ারদের বিস্মিত করে ওজনিয়াক চিপের সংখ্যা ৫০-এ নামিয়ে আনেন। ডিজাইন এতটাই দূর্ভেদ্য ছিল যে অ্যাসেম্বলি লাইন নকল করা প্রায় অসম্ভব ছিল। অ্যাটারি প্রস্তাবিত $৫,০০০ এর পরিবর্তে তাদেরকে মাত্র $৭০০ দিয়েছিল। এতে ওজনিয়াকের অংশ দাড়ায় $৩৫০। অবশ্য, ওজনিয়াক ১০ বছর পর আসল বোনাসের পরিমাণ জানতে পারেন। তবে তিনি বলেন যে যদি জবস তাকে এ সম্পর্কে জানাত এবং তার টাকাগুলোর প্রযোজনীয়তা সম্পর্কে বলত তাহলে তিনি তা তাকে দিয়ে দিতেন।
টেলিফোন নেটওয়ার্ককে নিপূনভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় টোন উত্‍পন্ন করতে,  দুই বন্ধু মিলে প্রথমে যে জিনিসটি তৈরি করেন সেটা হলো—একটা ব্লু বক্স। এই ব্লু বক্সটির সাহায্যে টেলিফোনকে বোকা বানিয়ে বিনামূল্য পৃথিবীর যে কোনো স্থানে কথা বলা যেত। এটা যদিও আইনসিদ্ধ ছিল না, কিন্তু মানুষ এটা পছন্দ করেছিল। এটা করে তারা ৬ হাজার ডলারের মতো যোগাড় করেছিল।

blue-box
স্টিভ জবস্‌ এবং ওজনিয়াকের প্রথম আবিষ্কার ব্লু বক্স

১৯৯৪ সালে একটি সাক্ষাত্‍কারে, জবস বলেন যে ব্লু বক্স কিভাবে তৈরি করতে হয় তা বুঝে উঠতে তাদের ছয় মাস সময় লেগেছিল। তিনি বলেন যে যদি ব্লু বক্সগুলো তৈরি না হত, তাহলে হয়ত অ্যাপলও থাকত না।
১৯৭৬ সালে, জবস এবং ওজনিয়াক নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন। তারা তাদের কোম্পানির নাম দেন “অ্যাপল কম্পিউটার কোম্পানি”। প্রথম দিকে সার্কিট বোর্ড বিক্রয়ের মাধ্যমে তারা এই কোম্পানি চালু করেন।
অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক বেশি পরিচিত হলেও শুরুর দিকে কোম্পানিটির তিনজন প্রতিষ্ঠাতা ছিল। বাকি একজন হচ্ছেন রোনাল্ড ওয়েন, যিনি অ্যাপলের প্রথম লোগোটি এঁকেছিলেন। কিন্তু ঋণের দায়ে ওয়েন তার ১০% শেয়ার মাত্র ৮০০ ডলারে বিক্রি করে দেন, যার বর্তমান মূল্য ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি!

logo1
রোনাল্ড ওয়েনের ডিজাইন করা প্রথম অ্যাপল লোগো

১৯৭৬ সালে ওজনিয়াক একক প্রচেষ্টায় অ্যাপল-১ কম্পিউটার উদ্ভাবন করেন। ওজনিয়াক কম্পিউটারটি জবসকে দেখালে, জবস তা বিক্রয় করার পরামর্শ দেন। তখন তারা এটিকে বিক্রয়ের জন্য রোনাল্ড ওয়েনকে সাথে নিয়ে জবসের গ্যারেজে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছরই ৬৬৬.৬৬ ডলারে অ্যাপল ১ কম্পিউটার বিক্রি শুরু হয়। এই দামের পেছনে একটা কারণ আছে। ধারণা করা হয়, স্টিভ এবং ওজনিয়াক সংখ্যা পুনরাবৃত্তি করতে পছন্দ করতেন, কেননা ৫০০ বা ৬৬৭ থেকে ৬৬৬.৬৬ টাইপ করা সহজ! ওয়েন অল্প কিছু দিন ছিলেন। অতঃপর তিনি জবস এবং ওজনিয়াককে ছেড়ে চলে যান। তিনি ছিলেন অ্যাপলের প্রাথমিক সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

Apple1
অ্যাপল ১ কম্পিউটার

ওয়েন চলে যাওয়ার পরও জবসের উৎসাহে উজ কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ তৈরি ও অ্যাসম্বলিংয়ে মন দিলেন। ১৯৭৭ সালের কিছুদিনের মধ্যেই অ্যাপল-১ এর চেয়ে উন্নতমানের একটা কম্পিউটার তৈরি করে ফেলেন। নাম দেওয়া হয় ‘অ্যাপল-২’। দুই বন্ধু আঁচ করতে পারলেন, অ্যাপল-২ বাজারের যেকোনো কম্পিউটারের চেয়ে গুণে-মানে সেরা হবে। হলোও তা-ই। কিন্তু ব্যবসা করতে হলে মূলধন লাগবে। আর তাই তারা ইন্টেলের তত্‍কালীন সাবেক পণ্য বিপণন ব্যবস্থাপক মাইক মার্ককুলা এর কাছে যান অর্থ প্রাপ্তির আশায়। মাইক মার্ককুলা তাদের কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব  বুঝতে দেরি করেননি। এই দুই হীরার টুকরা বন্ধুকে ঠিকই চিনলেন প্রসেসর নির্মাতা ইন্টেল করপোরেশনের সাবেক এই কর্মকর্তা। প্রতিভাবান বন্ধুদ্বয়কে আড়াই লাখ ডলার পুঁজি দিলেন। এর ফলে ১৯৭৭ সালের ৫ জুন প্লাস্টিক কেসে রঙিন মনিটর সমৃদ্ধ অ্যাপল টু বাজারে আসে। দেখতে দেখতে দুই বছরের মাথায় ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেল। বিশ্বজুড়ে তখন পার্সোনাল কম্পিউটার কেনার হিড়িক। সেই জোয়ারে ১ নম্বর কাতারে সবার পছন্দের তালিকায় উঠে এল অ্যাপল-২। ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠল। ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরের দিকে স্টিভ জবসের সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেল। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৫।

অ্যাপল ২ কম্পিউটার

১৯৭৮ সালে, অ্যাপল মাইক স্কটকে প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। ১৯৮৩ সালে, জবস পেপসি-কোলার জন স্কালীকে অ্যাপলের প্রধান নিবাহী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের জন্য প্রলুব্ধ করেন। জবস তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কি তোমার জীবনের বাকিটা সময় চিনির পানীয় বিক্রয় করে কাটাতে চাও, নাকি আমার সাথে এসে বিশ্বকে বদলে দিতে চাও?”
ইন্টেলের কর্মকর্তারা জবস্‌-কে বলেন যে- “অ্যাপল কোথাও যাবে না। তুমি একটা মস্ত বড় ভুল করছো”। কম্পিউটার জগতের অন্যান্যদের সঙ্গে জবসের পার্থক্য তার শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত নিশ্চুপ থাকা। কাজের মাধ্যমেই অন্যের জবাব দেয়া। নিশ্চুপ জবসের মাথায় সব সময় নতুন নতুন প্রযুক্তি খেলা করত। আর তাই জবস পিএআরসি, জেরক্সের রিসার্চ সেন্টারে এমন কিছু বানানোর চেষ্টা করছিলো যা পরে মাউস নামে পরিচিত হয়। স্টিভের মাথায় আর্থিক লাভের কথা ছিল না। তার মাথায় ছিল “ সবার জন্য কম্পিউটার”।
জবস একজন প্ররোচনামূলক এবং সহজাত দক্ষতা সম্পন্ন পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও, সে সময়ের তার কিছু কর্মচারী তাকে মেজাজী হিসেবে দেখতেন। বাজারে সুবিধা করতে না পারায় জবসের সাথে স্কালীর কাজের সম্পর্কে অবনতি ঘটে, যা তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। জবস মধ্যরাতেও সভা চালিয়ে যান, লম্বা ফ্যাক্স পাঠান এবং সকাল ৭টায় নতুন সভা আহবান করেন।
স্কালী জানতে পারেন যে জবস পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের দ্বারা একটি অভ্যত্থান সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং মে ২৪, ১৯৮৪ তারিখে, সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি পরিচালনা পরিষধদের সভা আহবান করেন। অ্যাপলের পরিচালনা পরিষদ স্কালীর পক্ষ নেয় এবং জবসকে ম্যাকিন্টশ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ফেলা দেওয়া হয়। জবস ধীরে ধীরে কাজে আসা বন্ধ করে দেন। মহাকাশচারী হিসেবে স্পেস শাটলে ওড়ার ব্যর্থ প্রয়াস এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে একটি নতুন কম্পিউটার কোম্পানি চালু করার কথা বিবেচনা করে, তিনি অ্যাপল থেকে পদত্যাগ করেন।
২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি বলেন যে অ্যাপল থেকে বহিষ্কারের ঐ ঘটনাটি ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। তিনি বলেন, “সফল হওয়ার ভার, নতুন করে শুরু করার আলোয় কেটে গিয়েছিল, সবকিছু সম্পর্কে কম নিশ্চিত ছিলাম। এটি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল অংশে প্রবেশ করতে সহায়তা করে।” তিনি আরও বলেন, “আমি মোটামুটি নিশ্চিত এর কিছুই ঘটত না যদি না আমাকে অ্যাপল থেকে বহিষ্কার করা হত। এটি ছিল ভয়াবহ ওষুধের মত, তবে আমি মনে করি রোগীর এটি প্রয়োজন ছিল।”
অ্যাপল থেকে পদত্যাগের পর ১৯৮৫ সালে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে জবস প্রতিষ্ঠা করেন নেক্সট ইনকর্পোরেটেড (NeXt Inc.)।এক বছর পর তার অর্থ সংকট দেখা দেয়, তার কোন পন্যও ছিলনা, ফলে তাকে বিনিয়োগকারীদের সরণাপন্ন হতে হয়। তিনি বিলিয়নিয়ার রস পেরটের মনোযোগ আকর্ষণ করেন, যিনি কোম্পানিতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেন। নেক্সট ওয়ার্কস্টেশন অবমুক্ত হয় ১৯৯০ সালে, এর মূল্য ছিল ৯,৯৯৯ মার্কিন ডলার।  শিক্ষাখাতের জন্য ডিজাইন করা হলেও, অধিক মূল্যের কারণে এটি বাজারে সুবিধা করতে পারেনি।
১৯৯৬ সালে, অ্যাপল নেক্সটকে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ক্রয়ের ঘোষণা দেয়। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে লেনদেন চূড়ান্ত হয়। এর মাধ্যমে অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জবসের কোম্পানিটিতে প্রত্যাগমন ঘটে। ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে, অ্যাপলের তত্‍কালীন প্রধান নির্বাহী গিল আমেলিওকে উচ্ছেদ করা হলে জবস কার্যত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। সেপ্টেম্বরে তিনি অন্তবর্তীকালীন প্রধান নির্বাহীর পদ পেয়ে যান।১৯৯৮ সালের মার্চে, অ্যাপলকে পুনরায় লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করা প্রচেষ্টা হিসেবে জবস নিউটন, সাইবারডগ এবং ওপেনডকের মত কিছু প্রকল্প বন্ধ করে দেন। জবস ম্যাকিন্টস ক্লোনের লাইসেন্সকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনেন, তিনি এটিকে প্রস্তুতকারকদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল করে দেন।
জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে বছরে মাত্র ১ মার্কিন ডলার বেতন গ্রহন করতেন। জবস ঠাট্টস্বরূপ বলেন যে অ্যাপল থেকে তিনি বছরে যে ১ মার্কিন ডলার পান, তার ৫০ সেন্ট পান বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য এবং বাঁকি ৫০ সেন্ট পান নিজের কাজের জন্য।
স্টিভ জবসের গাড়িতে কখনোই নম্বর থাকত না। কারণ, ক্যালিফোর্নিয়ার ট্র্যাফিক আইন অনুযায়ী সেখানে একটি নতুন গাড়ি নম্বর প্লেট ছাড়া ছয় মাস চালানো যায়। আর জবস কখনোই একটি গাড়ি ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করেননি!
স্টিভ জবস্‌ ১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলকে বিয়ে করেন। লরেন এবং তাঁর রয়েছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। এছাড়াও এক বান্ধবীর ঘরে আছে জবসের তরুণ বয়সের আরেকটি মেয়ে।
নেক্সটে কাজ করার সময় জবস্‌ বলেছিলেন, “আমি যখন বেঁচে থাকব না, তখন আমার সৃজনশীল কাজের জন্য সবাই বাহবা দেবে। কিন্তু কেউ জানবে না যে আমিও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারি।”
২০০৩ সালে জটিল প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের চিকিৎসা করান অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস এবং ওই সময় তাঁর অস্ত্রোপচারও করা হয়। কিন্তু তিন বছরের মধ্যেই আবার টিউমার হয় এবং ২০০৯ সালে তাঁর যকৃত প্রতিস্থাপন করতে হয়।
প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম দিকপাল ও এক সময়কার অ্যাপল সিইও স্টিভ জবস্‌ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে শেষ শব্দটি ছিল “ওহ ওয়াও”। সাংবাদিক ব্রেন্ট স্লেনডার ও রিক টেটজেলি ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ প্রকাশ করেন স্টিভ জবস্‌ এর বায়োগ্রাফি “বিকামিং স্টিভ জবস্‌”।
 লেখক : তামান্না নিশাত রিনি

স্টিভ জবস্‌ (পর্ব ১)

তথ্য-প্রযুক্তির আজকের এই যুগে অ্যাপল কম্পিউটার, আইফোন, আইপ্যাড, অ্যাইপড  এই শব্দগুলোর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এইসব যুগান্তকারী জিনিসের উদ্ভাবক কলেজের গণ্ডি পেরুতে না পারা একজন। নাম তাঁর স্টিভেন পল জবস্‌, যিনি স্টিভ জবস্‌ নামে সুপরিচিত। তাঁর রয়েছে একক এবং যৌথভাবে ৩৪২টি পণ্যের পেটেন্ট! কিংবদন্তী এই উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবককে পারসোনাল কম্পিউটার বিপ্লবের পথিকৃৎ বলা হয়।
স্টিভেন পল জবস ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম জোন স্কিবল ও পিতা সিরিয়ান ইমিগ্র্যান্ট আবদুল ফাত্তাহ জান্দালি। অবিবাহিত এবং স্টুডেন্ট বাবা-মার সন্তান স্টিভ জবস্‌-কে জন্মের পরপরই দত্তক দিয়ে দেয়া হয় পল ও ক্লারা জবস দম্পতির কাছে। পরবর্তিতে দত্তক পিতা-মাতার দেয়া “স্টিভ জবস্‌” নাম নিয়ে তিনি হন জগৎবিখ্যাত।

cr
স্টিভ জবসের ছোটবেলার ছবি

তিনি বেড়ে উঠেছেন এমন এক জায়গায়, যেটি পরবর্তী সময়ে বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির তীর্থস্থান হয়ে ওঠে। জায়গাটি সিলিকন ভ্যালি। একটা সময় ক্যালিফোর্নিয়ার ওই স্থানটি ইলেকট্রনিক বর্জ্যের ভাগাড় ছিল। অনেক প্রকৌশলী তাঁদের গ্যারেজ গড়ে তুলেছিলেন সেখানে। হয়ত তাঁদের দেখেই স্টিভ জবস্‌ স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজেও তাঁদের মত একজন হয়ে উঠার।
১৯৬৯ সালের দিকে স্টিফেন ওজনিয়াক নামের এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় জবসের। ইলেকট্রনিকসের প্রতি দুজনের গভীর আগ্রহ থাকায় বয়সে তাঁর চেয়ে পাঁচ বছরের বড় ওজের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে জবসের।

wozniak-and-jobs
ওজনিয়াক এবং স্টিভ জবস্‌

স্টিভ জবস কুপারটিনো জুনিয়র হাই স্কুল এবং হোমস্টিড হাই স্কুলে পড়ার পর ১৯৭২ থ্রিস্টাব্দে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং রীড কলেজ়ে ভর্তি হন। কিন্তু রীড লিবারেল আর্টসের ওপর বেশ ব্যয়বহুল একটি কলেজ ছিল। অসচ্ছ্বল পল-ক্লারা দম্পতির পক্ষে সেই ব্যয়ভার বহন করা কষ্টকর ছিল। জবসের জন্মদাত্রী মাকে তাঁরা কথা দিয়েছিলেন, ছেলেটাকে ভালো কোথাও পড়াবেন। সেই কথা রক্ষা করতে রিড কলেজেই ভর্তি করালেন জবসকে। কিন্তু এক সেমিস্টারের বেশি আর এগোতে পারেননি জবস। ঝরে পড়েন। যদিও তিনি পরবর্তীতে কলেজ ছেড়ে দেন তার পরেও তিনি  ক্যালিগ্রাফীসহ আরো কিছু ক্লাসে যোগদান করেছিলেন।এই সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল “যদি আমি ওই কোর্সে না যেতাম তবে ম্যাকের কখনোই বিভিন্ন টাইপফেস বা সামঞ্জস্যপূর্ণ ফন্টগুলো থাকতো না।” ক্যালিগ্রাফিতে উৎসাহ থাকার জন্য তিনি তার বন্ধুদের সাথে থেকে সে ক্লাসগুলো করেন । এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার কোন রুম ছিল না, বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে আমি ঘুমাতাম। মানুষের ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে আমি পাঁচ সেন্ট করে রোজগার করতাম, যেটা দিয়ে আমি খাবার কিনতাম। প্রতি রোববার রাতে আমি সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য।’
১৯৭৪ সালে জবস ক্যালির্ফোনিয়াতে পুনরায় চলে আসেন। এ সময় তিনি নিয়মিত স্টিফেন ওজনিয়াকের সাথে হোমব্রিউ কম্পিউটার ক্লাবের সভাগুলোতে উপস্থিত থাকতেন এবং ভিডিও গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আটারিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি এসময় মূলত ভারতে যাবার জন্য অর্থ জমানোর চেষ্টা করছিলেন। আর তাই আলোকিত জীবন গড়তে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন স্টিভ জবস। চলে এসেছিলেন ভারতে। সেখানে নিম কারোলি বাবার সাথে সাক্ষাত্‍ করার জন্য জবস তার কৈঞ্চি আশ্রমে যান রিড কলেজের বন্ধু ড্যানিয়েল কোটকেকে সাথে নিয়ে। কিন্তু তা প্রায় জনশূন্য অবস্থায় ছিল, কারণ নিম কারোলি বাবা ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে মারা যান। এরপর তারা চলে যান হরিয়াখান বাবার আশ্রমে।

78507.122173-Steve-Jobs-e-Daniel-Kottke
স্টিভ জবস্‌ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ড্যানিয়েল কোটকে

ভারতে তারা কয়েকবার বাস ভ্রমণ করেন। দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশ, সেখান থেকে ফিরে হিমাচল প্রদেশ এরপর পুনরায় দিল্লি ফিরে আসেন।সাত মাস অবস্থানের পর জবস ভারত ত্যাগ করেন। ভারত থেকে ফেরার পর জবসের নতুন আবির্ভাব ঘটে। তার মস্তক মুন্ডিত ছিল এবং তিনি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। এছাড়া তিনি বৌদ্ধধর্মের অনুসারি হয়ে ওঠেন। তিনি রপ্ত করেছিলেন ভিন্ন ধারার জীবনযাপন। রীতিমতো উপবাস করতেন। ফলমূল খেয়ে কাটিয়ে দিতেন দিনের পর দিন।
লেখক : তামান্না নিশাত রিনি

ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার

স্মার্টফোনের জন্য ফেসবুক মেসেঞ্জারের স্বতন্ত্র ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে ফেসবুক। তাই বলে ভাববেন না যে ফেসবুক বন্ধুদের সাথে চ্যাট করা বন্ধ করে দিয়েছে। ফেসবুক কখনোই মেসেঞ্জারকে ফেসবুক থেকে বাদ দিবে না। বরং আজ থেকে messenger.com দিয়ে মেসেঞ্জারের জন্য নতুন ওয়েব ব্রাউজার ভার্সন চালু করেছে, যেখানে আপনি বন্ধুদের সাথে শুধুমাত্র চ্যাট করতে পারবেন। আপনি যদি নিউজ ফিড আপডেট বা বন্ধুদের প্রোফাইল দেখতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ফেসবুকের মূল ওয়েবসাইটে যেতে হবে । এই ফেসবুক মেসেঞ্জারের একটাই উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে তাৎক্ষণিক বার্তা আদান-প্রদান (ম্যাসেজিং)। কেবল চালু হওয়া এই ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনটি মোবাইল এবং ডেক্সটপে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ডেস্কটপে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এখানে আপনি ছবি, স্টিকার, সিগনেচার ইত্যাদি পাঠাতে পারলেও এখনো ডেস্কটপে কোনো ভয়েস ম্যাসেজ রেকর্ড বা পাঠানোর সুবিধা যোগ করা হয়নি। একটি মেন্যু সেটিংস রয়েছে যেটি দিয়ে আপনি সাউন্ড ইফেক্ট বন্ধ বা চালু করতে পারবেন। তবে আপনি যদি কাউকে ব্লক করতে চান বা গোপনীয়তা পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ফেসবুকের প্রধান ওয়েবসাইটে যেতে হবে। যদি আপনি শুধু মাত্র চ্যাট করতে চান তবে এটি আপনার জন্য একটি চমৎকার অ্যাপ।
লেখকঃ ইমরান হোসেন।

অ্যাডা লাভলেস – বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামার

সাল ১৮১৫। ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ। ইংল্যান্ডে সে সময় বড্ড শীত। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত বায়রন পরিবারে জন্ম হলো এক শিশু সন্তানের। সেই শিশু সন্তানটি বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রন এবং অ্যানি ইসাবেলার কন্যা, অগাস্টা অ্যাডা; পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার-যিনি অ্যাডা লাভলেস নামেই সুপরিচিত।

অ্যাডা লাভলেস-প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার
অ্যাডা লাভলেস-প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার

পুরো নাম তাঁর অ্যাডা অগাস্টা কিং, আর ডাকা হতো কাউন্টেস অফ লাভলেস বা শুধুই অ্যাডা লাভলেস নামে। তাঁর বাবার সৎ-বোন অগাস্টা লেই এর নামে মেয়ের নাম রাখা হয়, আর বায়রন তাঁকে অ্যাডা নাম দেন। মাত্র একমাস যখন অ্যাডার বয়স, তখন থেকে তাঁর মা ইসাবেলা তাঁকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান। পিতা বিখ্যাত রোমান্টিক কবি লর্ড বায়রনের সাথে অ্যাডার কখনো দেখা হয়নি। এমনকি ১৮৪১ সালের আগে অ্যাডা জানতেনই না লর্ড বায়রন তাঁর বাবা!
ছোট থেকেই অ্যাডা কিছুটা অসুস্থতায় ভুগছিলেন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা হতো এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ছিল। ১৮২৯ সাল থেকে তিনি হাম এবং পক্ষাঘাতগ্রস্থতায় ভুগছিলেন। কিন্তু ক্র্যাচে ভর দিয়ে হলেও শিক্ষা চালিয়ে গিয়েছেন। বাসায় গৃহশিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিতেন তাঁকে। গণিতজ্ঞ ও যুক্তিবিদ ডি-মরগ্যান তাঁর শিক্ষক ছিলেন। স্যার চার্লস ডিকেন্স, স্যার চার্লস হুইটস্টোন এবং বিজ্ঞানি মাইকেল ফ্যারাডের সাথেও তাঁর জানাশোনা ছিল।
অ্যাডা লাভলেসের মায়ের একদমই ইচ্ছা ছিলনা তার মেয়ে বাবার প্রতিভা পাক। তাই ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে তিনি সঙ্গীতে এবং গণিতে ব্যস্ত করে রাখেন। মায়ের প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি – তাঁর গণিত প্রতিভা বিচ্ছুরিত হয়েছে উজ্জ্বল আলোকরশ্মির মত। ১৮৩২ সালে যখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর, তখন তিনি ফ্লাইং মেশিনের নকশা প্রণয়ন করেন।
১৮৩৫ সালের ৮ জুলাই তিনি  উইলিয়াম কিং এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁর নামের সাথে কিং যুক্ত হয়। ১৮৩৩ সালের ৫ জুন তাঁর সাথে পরিচয় হয় বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজের। স্যার চার্লস উইলিয়াম ব্যাবেজ তখন তাঁর ডিফারেন্স মেশিন বা অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন নামক কম্পিউটার আবিষ্কারের নেশায় মত্ত। ব্যাবেজকে তখন লোকজন পাগল মনে করতো। তাঁর এই অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিনের ধ্যানধারণা যেই গুটিকয়েক মানুষ বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অ্যাডা অন্যতম। অ্যাডা তাঁর গণিতবিষয়ক বিশ্লেষণী ক্ষমতার দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন এই কম্পিউটারগুলোর নাম্বার ক্রাঞ্চিং এর অমিত সম্ভাবনা সম্পর্কে।চার্লস ব্যাবেজ তাই লিখে গেছেন তাঁর Decline of Science in England বইয়ে। তখনকার দিনে এই যন্ত্রটির কাজ ব্যাখ্যা করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল, এবং অনেক বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ তাঁর চিন্তাধারাটিকে সমর্থন করেন নি। কিন্তু অ্যাডা যন্ত্রটির কার্যপদ্ধতি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা দেন। ব্যাবেজ অ্যাডার ধীশক্তি, সাবলীলতা, প্রতিভা এবং গাণিতিক দক্ষতায় মুগ্ধ ছিলেন। ব্যাবেজ অ্যাডা সম্পর্কে তাঁর লেখায় অ্যাডাকে সংখ্যার জাদুকরি (The Enchantress of Numbers) বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অ্যাডার মৃত্যুর ১০০ বছর পর অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন সম্পর্কে তাঁর একটি নোট প্রকাশিত হয়। সেই নোটের G-নং এ তিনি Bernoulli numbers এর একটি সিকোয়েন্স ক্যালকুলেশন করার জন্য একটি অ্যালগরিদম বর্ণনা করেন যা পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসেবেই পরিচিত। অ্যানালিটিকাল মেশিন (যা বর্তমান কম্পিউটারের পূর্বপুরুষ)-এর মত এই নোটটি ছিল মেশিনটির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এর বর্ণনা। আর এ কারণেই অ্যাডা অগাস্টা লাভলেস পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার হিসেবেই পরিচিত।

Bernoulli numbers এর ক্যালকুলেশন- পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম।
Bernoulli numbers এর ক্যালকুলেশন- পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম।

অ্যাডা তাঁর সারা জীবন ধরে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য কাজ করে গেছেন। ব্যাবেজ এর সাথে তাঁর বিখ্যাত কাজের পরও তিনি তাঁর অন্যান্য কাজগুলো চালিয়ে যান। তাঁর ইচ্ছা ছিল এমন একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করা যা দিয়ে স্নায়ু (Nerve) কিভাবে উদ্দীপ্ত হয় তা বের করা। অর্থাৎ তিনি নার্ভাস সিস্টেমের উপর একটি গাণিতিক মডেল তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যাল এবং ম্যাগনেটিজম এর উপর গবেষণা করেছেন।
এই টেক-জিনিয়াস ১৮৫২ সালের ২৭ নভেম্বর, মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে মর্যাদা দিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা (US Defense) বিভাগের প্রমিত প্রোগ্রামিং ভাষার নাম রাখা হয় অ্যাডা (Ada)। Conceiving Ada নামে তাঁকে নিয়ে একটি সিনেমাও আছে। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্ট অথেনটিসিটি হলোগ্রামে রয়েছে তাঁর ছবি। কম্পিউটিং এবং প্রোগ্রামিং এ বিশেষ অবদানের কারণে ২৪ মার্চকে Ada Lovelace Day হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করা হয়ে থাকে।
লেখকঃ তামান্না নিশাত রিনি।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।

সফটওয়্যার ডেভেলাপার কোথায় পাব

শাহাদাত স্যারের সাথে আমার পরিচয় বছর পাঁচেক আগে। মাঝে-মধ্যে উনার সাথে দেখা সাক্ষাত হয়, কথা হয়। এবং অন্য অনেক মানুষের মতোই উনি বিনা কারণে আমাকে পছন্দ করেন। উনি আবার মুনির হাসান স্যারের বন্ধু। ক্যারিয়ার শুরু করেন বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)-এ শিক্ষকতার মাধ্যমে। পরে কানাডায় পিএইচডি শেষ করে আইবল নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৩ বা ২০০৪ সালে সেটির বাংলাদেশ অফিস খোলেন এবং ২০১০-এ উনি বাংলাদেশে চলে আসেন। এখন কাজ করছেন উনার অপেক্ষাকৃত নতুন কোম্পানী শিওরক্যাশ নিয়ে।
শিওরক্যাশের আগে অফিস ছিল মহাখালী ডিওএইচএস-এ। সেখানে বেশ কয়েকবার গিয়ে ভালোমন্দ খেয়েছি। কীভাবে কীভাবে যেন আমার যাওয়াটা এমন সময়ে হতো যে আমাকে না খাইয়ে বিদায় করাটা ভালো দেখাত না। তো একবার দেখি খাওয়ার টেবিলে একজন বেশ উৎসাহ নিয়ে আমাকে খাবার পরিবেশন করছে। সে অফিসের টুকটাক অফিশিয়াল কাজ করত, যেমন ব্যাংকে দৌড়াদৌড়ি করা, খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা, ছোটখাট অফিস ম্যানেজমেন্টের কাজ, কিছুদিন আগে দেখলাম অফিশিয়াল ইভেন্টে ছবিও তোলে। তো প্রথম পরিচয় হওয়ার সময় সে আমাকে বলেছিল, স্যার, আপনাকে দেখে চিনতে পেরেছি, আমি আপনার বই পরে প্রোগ্রামিং শিখি। জানতে পারলাম সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তার প্রোগ্রামিং শেখা, তাও আমার বই পড়ে – বিষয়টা বেশ ভালো লেগেছিল।
তো শাহাদাত স্যার তাঁর শিওরক্যাশের জন্য ব্যাপক পরিমান বিদেশি বিনিয়োগ যোগাড় করেছেন। সেই সাথে বনানীতে নতুন অফিসও নিয়েছেন। সেই অফিসের উপরের তলায় একটা নতুন রেস্টুরেন্ট হয়েছে, সেটার উদ্বোধন উনি করলেন একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে। শনিবার দুপুর বেলা দাওয়াত, আমি তো মহা উৎসাহে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির হর্তাকর্তাদের একাংশ উপস্থিত! কনা সফটওয়্যারের সিআইও, রিভ সিস্টেমসের সিইও-সহ আরো অনেকে। আমার ব্যাবসায়িক পার্টনার মুক্তসফটের সিইও মাহমুদও চলে এসেছে। তো কাবাব ধরণের একটা খাবার পরিবেশন করা হলো। তারপর অপেক্ষা করছি, লাঞ্চ শুরু হচ্ছে না কেন। বুঝতে পারলাম সবাই কোনো একজনের জন্য অপেক্ষা করছে। বেশ অনেকক্ষণ পরে উপস্থিত হলেন কায়কোবাদ স্যার। সাথে বুয়েটের আরেক শিক্ষক মোস্তফা আকবর স্যার। স্যারদের দেখে আমি মহা খুশি। নিশ্চয়ই এখন খানা শুরু হবে!
IMG_3770
তো খাওয়া-দাওয়ার মাঝে কায়কোবাদ স্যার বিভিন্ন গল্প করছিলেন। হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সুবিন, ইন্ডিয়ার সাথে খেলা দেখছ নাকি?”, আমি জবাব দিলাম, “কোন খেলা স্যার?” উনি আর কথা বাড়ালেন না। আসলে খাওয়া-দাওয়ার সময় আমি সেই ম্যাচের কথা আমি মনে করতে চাচ্ছিলাম না। যাই হোক, ভরপেট খাওয়া হলো।
খাওয়ার পরে আমরা বসলাম আড্ডা দিতে। মূল বিষয়, বাংলাদেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা (মানে দূরবস্থা আর কী)। বিভিন্ন কোম্পানীর শীর্ষ পদের লোকজন – সবারই এক কথা, ভালো প্রোগ্রামার তো পাই না। তো সবার কথাই শুনছিলাম। দেশে এত এত সিএস গ্রাজুয়েট, কিন্তু ভালো প্রোগ্রামার নাই। মনে পড়ে গেল, মুনির হাসান স্যারের ডায়লগ। একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “সুবিন, বল তো ‘Water water everywhere, but nor any drop to drink’ এটা কে বলে?” জবাব দিলাম, এটা তো Ancient Mariner-এ কবি Coleridge লিখেছেন। মুনির স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু এটা কে বলে? আমি বললাম, কে বলে? উনি জবাব দিলেন, থাক আমি আর জবাবটা এখানে লিখলাম না। তো যাই হোক, আরো বেশ কিছু আলোচনা হলো। এমন সময় শাহাদাত স্যার আমাকে ধরলেন। সুবিন, তুমি তো কিছু বলছ না। তোমার কাছ থেকে এবার শুনতে চাই। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “স্যার, চা-কফি’র ব্যবস্থা নাই?” ততক্ষণে দই ও রসমালাই খাওয়া শেষ। পেঁপেঁও ছিল কিন্তু সেটা আর আমার খাওয়া হয়ে ওঠে নাই।
IMG_3797
তো আলোচনা শেষে শিওরক্যাশের অফিস ঘুরে দেখলাম। তারপর সবাই একে একে বিদায় নিচ্ছিল। শাহাদাত স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, কেউ কফি খাবেন? আমি বললাম, স্যার আমি। তো সবার তাড়া ছিল, চলে গেল। কিন্তু আমার কোনো তাড়া নাই। তাই স্যারের সাথে বসে কফি খেলাম, গল্পও হলো অনেক। স্যার বললেন, “সুবিন, শিওরক্যাশের জন্য আমার বিভিন্ন লেভেলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার দরকার। অনেক ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে ফেলেছি। টিম বড় করতে হবে, অনেক কাজও আছে।” আমার মজা করে বলতে ইচ্ছা করছিল, স্যার, প্রতি প্রোগ্রামার এক লাখ টাকা রেফারাল ফি দেন আমাকে, আমি যোগাড় করে দেই। কিন্তু মজা করে বলি নাই এটা। কারণ এটা বললে স্যার সত্যি সত্যি যদি রাজি হয়ে যেতেন, আমি পড়তাম মহা বিপদে। ভালো সফটওয়্যার ডেভেলাপার কোথায় পাব?

ডেনিস রিচি – সি ও ইউনিক্সের জনক

আমরা যারা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং করি , তাদের অনেকেরই প্রোগ্রামিং-এ হাতেখড়ি হয় সি প্রোগ্রামিং ভাষার মাধ্যমে। এই লেখায় আমরা জানবো সি প্রোগ্রামিং এর জনক ডেনিস রিচি সম্পর্কে।
ডেনিস রিচি ১৯৪১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ব্রনস্সভিল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম ডেনিস  ম্যাকএলিস্টেয়ার রিচি। তাঁর নামের তিনটি অংশের আদ্যক্ষর নিয়ে তিনি ডিএমআর (DMR) নামের পরিচিত ছিলেন। তাঁর বাবা এলিস্টেয়ার ই. রিচি  ছিলেন বেল ল্যাবের একজন বিজ্ঞানী এবং সুইচিং সার্কিট তত্ত্বের বই “The Design of Switching Circuits”-এর সহ লেখক।
রিচির জন্ম নিউইয়র্কে হলেও তাঁর শৈশবেই তাঁর বাবা-মা নিউ জার্সিতে চলে যান। সেখানকার সামিট হাই স্কুল-এ (Summit High School)  তিনি পড়াশোনা করেন। সেখানকার পড়াশোনার পাঠ শেষ হবার পর তিনি স্নাতক ভর্তি হন জিনিয়াসদের সূতিকাগার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার পদার্থবিজ্ঞান এবং ফলিত গণিত বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করার পর ১৯৬৭ সালে তিনি যোগদান করেন বেল রিসার্চ ল্যাব-এ। ১৯৬৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি “Program Structure and Computational Complexity”  টপিকে প্যাট্রিক সি ফিশারের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। যদিও তিনি অফিসিয়ালি তাঁর পিএইচডি ডিগ্রী কখনো গ্রহণ করেননি।
সি প্রোগ্রামিং ভাষার উদ্ভাবক এবং ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের শুরুর দিকের অবদানকারীদের মধ্যে ডেনিস রিচির নাম উল্লেখযোগ্য। তবে রিচি সবচেয়ে বেশি পরিচিত সি প্রোগ্রামিং ভাষার উপর রচিত বই “The C programming Language” বইয়ের সহ লেখক হিসেবে। এই বইয়ের লেখকদ্বয় কার্নিংহাম ও রিচি তাঁদের দুজনের নামের আদ্যক্ষর K&R দিয়েই সুপরিচিত।

সি প্রোগ্রামিং বইয়ের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ (ছবি : উইকি কমন্স)
সি প্রোগ্রামিং বইয়ের প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ (ছবি : উইকি কমন্স)

সি প্রোগ্রামিং ভাষার উদ্ভাবন এবং কেন(Ken) থম্পসনের সঙ্গে ইউনিক্সের উন্নয়নে তাঁর অবদান রিচিকে আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের অগ্রনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এপ্লিকেশন ও অপারেটিং সিস্টেম এবং এমবেডেড সিস্টেম উন্নয়নে ব্যবহার হওয়ার পাশাপাশি সি প্রোগ্রামিং ভাষা অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষাকেও প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে। একই ভাবে আধুনিক কম্পিউটিং-এর বিকাশে ইউনিক্স সিস্টেমের অবদান অনস্বীকার্য।

Ken n dennis.jpg
কেন থমসনের সাথে ডেনিস রিচি (ডানে) (ছবি : উইকি কমন্স)

১৯৮৩ সালে রিচি এবং থম্পসন যৌথভাবে  টুরিং পুরস্কার লাভ করেন। তাঁদেরকে জেনেরিক অপারেটিং সিস্টেমের তত্ত্ব বিশেষ করে ইউনিক্সে তা প্রয়োগ করার কারণে” এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। পুরস্কার প্রাপ্তিতে রিচি “রিফ্লেকশন অন সফটওয়্যার রিসার্চ (Reflections on Software Research)” নামে বক্তৃতা দেন।
সি প্রোগ্রামিং ভাষার উদ্ভাবন ও ইউনিক্সের উন্নয়নে অবদানের জন্য রিচি ১৯৮৮ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এ নির্বাচিত হন। একই ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রিচি এবং থম্পসন ১৯৯০ সালে ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স (IEEE) প্রবর্তিত আইইই রিসার্চ ডব্লিউ হামিং পদক লাভ করেন।
সি প্রোগ্রামিং ভাষা এবং উইনিক্স অপারেটিং উদ্ভাবনের মাধ্যমে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, এবং সিমুলেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহে বিশেষ অগ্রগতি লাভ করা সম্ভব হয় এবং এর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিতে থাকে। এই অবদানের জন্য খম্পসন ও রিচি ১৯৯৮ সালে আমেরিকার জাতীয় প্রযুক্তি পদকের (National Medal of Technology) জন্য নির্বাচিত হোন। ১৯৯৯ সালের ২১ এপ্রিল আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তাঁদের হাতে এ পদক তুলে দেন।
২০০৫ সালে Industrial Research Institute ডেনিস রিচিকে তথ্য প্রযুক্তিতে অবদানের জন্য IRI Achievement Award এ ভূষিত করে।
ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ২০১১ সালে রিচি ও থম্পসন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে জাপান পুরস্কার লাভ করেন।
ডেনিস রিচি ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর , বার্কলে হাউজ, নিউ জার্সিতে তাঁর নিজ বাসভবনে অনেকটা নীরবে এবং নিভৃতে মৃত্যুবরণ করেন। রব পিকে নামক তাঁর এক সহকর্মী তাঁর মৃত্যুর বিষয় প্রথম নিশ্চিত করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর সঠিক সময় বা কারণ কোনোটিই প্রকাশ করা হয়নি। সংবাদ মাধ্যমেও এই কিংবদন্তী বিজ্ঞানীর মৃত্যুসংবাদ প্রচার হয় স্বল্পপরিসরে। ডেনিস রিচির মৃত্যুর পর  জেমস গ্রিমেল্ম্যান তাঁর টুইটার এ্যাকাউন্টে টুইট করে লেখেনঃ  “তাঁর পয়েন্টার শূন্যতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তাঁর প্রসেসকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে এক্সিট  কোড ০ দিয়ে।”
লেখক: তামান্না নিশাত রিনি